রাঙামাটি প্রতিবেদকঃ পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে দুইদিনে তিনটি ইটভাটা বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বুধবার (২১ জুন) জেলার কাপ্তাইয়ে একটি এবং বৃহস্পতিবার (২২জুন) জেলার বাঘাইছড়ির দুইটি অবৈধ ইটভাটা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বন্ধ করে দিয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। যদিও এই তিনটি ইটভাটা গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল!
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর ৪ ধারা লঙ্ঘনের দায়ে বুধবার বিকালে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের ভালুকিয়ায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা একটি ইটভাটাকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একইসঙ্গে অবৈধ ইটভাটাটি উচ্চ আদালতের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ জারি করা হয়েছে।
কাপ্তাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারজাইন হোসাইন জানান, ‘মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করায় সংশ্লিষ্ট ইটভাটাকে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর ৪ ধারা লঙ্ঘনের অপরাধে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া অবৈধ ইটভাটাটি বন্ধে নোটিশ জারি করা হয়েছে।’
এদিকে, বৃহস্পতিবার বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরে অবস্থিত কেবিএম ও এমএমসি নামের দুইটি ইটভাটা বন্ধ করে দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ইটভাটা দুইটিতে আগে থেকেই ইট প্রস্তুত বন্ধ থাকায় জরিমানা করেনি ভ্রাম্যমাণ আদালত।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুমানা আক্তার বলেন, ‘বাঘাইছড়িতে নাহিদ-উল আলমের মালিকানাধীন কেবিএম ও আবুল কাসেমের মালিকানাধীন এমএমসি নামে দুইটি ইটভাটা হাইকোর্টের রিটের প্রেক্ষিতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাঘাইছড়ি উপজেলায় দুইটি ইটভাটা ছিল। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দুইটি ইটভাটাই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’
তবে গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি কাপ্তাইয়ের ভালুকিয়ার ইট ভাটাটিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানাসহ বন্ধ করেছিলেন জেলা প্রশাসনের তৎকালীন সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লাইলাতুল হোসেন। এছাড়া বৃহস্পতিবার বাঘাইছড়িতে কেবিএম ও এমএমসি নামে বন্ধ করে দেয়া দুইটি ২০২২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারিতে ২০ হাজার টাকা করে ৪০ হাজার টাকা জরিমানাসহ বন্ধ করে দিয়েছেন তৎকালীন ইউএনও শরিফুল ইসলাম। এছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ইটভাটা দুটির সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বন্ধের কিছুদিন পরই ভাটা দুইটি ফের চালু করে ইট প্রস্তুত করা হয়।
আগে থেকে বন্ধ করে দেয়া ইটভাটা নতুন করে বন্ধের নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাঘাইছড়িতে ইটভাটা দুইটি আগে বন্ধের কথা আপনার থেকে শুনেছি। এই বিষয়ে অবশ্যই আরো এলার্ট (সতর্ক) থাকবে বলে। আপনাদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।’
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটির সব অবৈধ ইটভাটা সাতদিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছিল আদালত।
সর্বশেষ গত ১৯ জুন (সোমবার) খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলার অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করতে তিন জেলা প্রশাসককে (ডিসি) আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ নোটিশ পাঠান। আইনি নোটিশের পর ফের অবৈধ ইটভাটা বন্ধে তৎপরতা শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন।